Ramadankareem


রোজা রাখার স্বাস্থ্যগত উপকারীতা    

একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম। জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের দিকনির্দেশনা বিদ্যমান। ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি তার মধ্যে রোজা অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা সকল সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর রোজাকে ফরজ করে দিয়েছেন। অনেকে মনে করেন রোজা রাখলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার কল্যানের জন্যই রোজাকে ফরজ করেছেন। রোজা রাখার ধর্মীয় ফজীলত অনেক। রোজা রাখার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও লক্ষণীয়। আসুন জেনে নেই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে রোজা রাখার কতিপয় উপকারিতা।

১। মোটা ব্যাক্তির জন্যঃ


অতিরিক্ত খাবার গ্রহন সবসময় স্বাস্থ্যের পক্ষে সুখকর নয়। তাই তো ইসলামে অতিরিক্ত খাবার গ্রহনে নিষেধ রয়েছে। অতিরিক্ত খাবার দেহে প্রচুর চর্বি জমিয়ে ফেলে, এতে শরীর অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়, যা স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাঁধার সৃষ্টি করে। বাড়তি চর্বি দেহের বিভিন্ন স্থানে যেমন চামড়ার নিচে, শিরা উপশিরা এমনকি হৃৎপিন্ডে জমা হতে পারে। ফলে রক্তনালীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু রোজা রাখলে শরীরে জমে থাকা এসব চর্বি শরীরের কাজে ব্যবহৃত হয় ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এ সমস্ত রোগীদের সেহরি ও ইফতারে অবশ্যই হালকা খাবার খাওয়া উচিত।

২। হৃদরোগ, হাঁপানি ও উচ্চরক্তচাপ রোগীদের জন্য রোজাঃ


রোজা রক্তে ক্ষতিকর ফ্যাট এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগের ঝুকিও অনেকখানি অনেক কমে যায়। স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ শরীরের বিপাকক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। রোজা রাখার ফলে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে আসে ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বিপাকক্রিয়া বেড়ে যায়। রোজা রাখলে মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা কমে যায়, কাজের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায়, এটি উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য খুবই ভাল। অধিকাংশ হাঁপানি রোগীর জন্যও রোজা বেশ উপকারী।

৩। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য রোজাঃ


রোজা টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী নেয়ামত। তাই যেসমস্ত ডায়াবেটিস রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য রোজা রাখাটা ও খুবই জরুরী। তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দিনে দুই বেলার অধিক ইনসুলিন গ্রহন করের যারা, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখলে ভাল হয়।

৪। আলসার রোগীদের জন্য রোজাঃ


রোজা আলসার রোগীর জন্যও ফলপ্রসু। অনেক সময় দেখা যায় আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখলে ভাল থাকেন। তবে কারো কারো সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের জন্য রোজা রাখার বিষয়টি অনুশীলনের উপর নির্ভর করে।

৫।ধূমপান ও মদ্যপান কমিয়ে দেয়ঃ


ধূমপান ও মদ্যপান স্বাস্থের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেকথা আমরা সবাই ই জানি। যা কিছু আমাদের জন্য ক্ষতিকর তা ইসলাম আমাদের জন্য হারাম করেছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের অনেক আগে থেকেই ইসলাম ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিল। ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া ও অ্যালকোহল মানুষের শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করে। রোজা রাখলে ওই সমস্ত লোক এসব থেকে বিরত থাকতে পারবেন। বলা যেতে পারে ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে রমজান মাস।

স্বাস্থ্য গবেষকদের মতে সারা বছর অতিরিক্ত খাবার, অখাদ্য, ভেজাল খাবার ইত্যাদি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে জৈব বিষ জমা হয়। এই জৈব বিষ শরীরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে ও নানা রকম জটিল রোগ সৃষ্টি করে। যদি আমরা পুরো এক মাস সঠিক ভাবে রোজা পালন করি তাহলে এসব বিষ শরীর থেকে দূর হয়ে যাবে। আমাদের শরীর হবে বিষমুক্ত ও নীরোগ। এসব তো হবেই সাথে মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালন হবে, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।
রোজা ইসলামের পঞ্চম ভিত্তির একটি এবং অত্যাবশকীয় ফরজ। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রোজা পালন অবশ্য কর্তব্য। আসুন আমরা সবাই আল্লাহ তায়ালার বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করি, সুস্থ থাকি, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করি।