ডায়েরি আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মানুষ শখের বশে,দৈনিক প্রয়োজনে কিংবা অবসরে সময় কাটাতে ডায়েরি লিখে। ডায়েরি লিখাকে অনেক ব্যাক ডেটেড ভাবেন! কিন্তু ডায়েরি একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে দিন বদলের পালে হাওয়া লাগিয়ে ডায়েরিতে ও এসেছে পরিবর্তন। একসময় ডায়েরি বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠতো লাল,নীল,সবুজ অথবা সাদা, বিভিন্ন রঙের কাগজের মলাটবন্দী সমাহার! কিন্ত বর্তমানে ডায়েরি হয়েছে ভার্চুয়াল,যাতে কাগজ কলমের বালাই নেই।
ডায়েরির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে যারা সম্যক অবহিত নই তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেল।

ইতিবাচক পরিবর্তন আনেঃ

ডায়েরি ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। ‎ডায়েরি লিখা বলতে আমরা সাধারণত দিনলিপিকেই বুঝি। তবে দিনলিপি ছাড়া ও শখের বসে টুকিটাকি নোট ও ডায়েরির অংশ হতে পারে। মোটকথা কোনো শখের বসে অথবা মনের পূর্তিতে কিংবা জীবনযাপনের স্বাভাবিক কথা ডায়েরিতে টুকে রাখাই হলো ডায়েরি লেখা। ডায়েরি লিখার মাধ্যমে একজন মানুষের হাতের লেখার হাত পাঁকা হয়ে উঠে। লেখার অগোছালো ভাবটা কেটে যায়।
দিনশেষে ডায়েরির পাতায় আপনার সারাদিনের কর্ম ভেসে উঠে। এতে আপনার উচিত-অনুচিতের বোধ বৃদ্ধি পায়। ভালো অভ্যাস গুলো আপনার মনে তৃপ্তি জাগায়। মন্দ অভ্যাস গুলো বদলে যাওয়ার আহ্বান জানায়। মোটকথা ডায়েরি আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

 নিজেকে চেনা যায়ঃ

ডায়েরি লেখার মাধ্যমে নিজেকে চেনা যায়। ‎ডায়েরীতে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ববোধ ও রুচির প্রকাশ ঘটে। নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগা ফুটে উঠে ডায়েরিতে। কোনো ঘটনায় নিজের অভিমত ও ব্যক্ত হয় এর মাধ্যমে। এমনকি ডায়েরি একজন ব্যক্তির জীবনী হয়ে উঠতে পারে। কারণ, ব্যক্তির ভেতর জমে থাকা আবেগ ও অনুভূতি ডায়েরির পাতার কালো অক্ষরে স্থান পায়। কোনো কিছুর উপর নিজের প্রভাব ও নিজস্ব দৃষ্টিকোণের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটে ডায়েরিতে।


 অবসরের বন্ধুঃ

কথাটা শুনে আপনার বাড়াবাড়ি মনে হলেও এটি মোটেও বাড়াবাড়ি নয়। ডায়েরিতে শুধু আপনার নিত্য যাপিত জীবনের উল্লেখ থাকে এমনটা নয়। সেখানে থাকতে পারে আপনার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কোনো নিবিড় অরণ্যের বৃক্ষরাজীর আপন তালে দুলে দুলে গাওয়া গান! কি অবাক হলেন?
 ‎আচ্ছা,আপনি ভাবুন তো আপনার যদি তেমন কোনো ঘনিষ্ট বন্ধু না থাকে তখন মনের ভেতর ধুকতে থাকা কষ্টের ভার আপনি কোন বন্ধুর ঘাড়ে চাপান?!
 ‎নিশ্চয় ঘরের এক কোনে পড়ে থাকা ঐ বোকা ডায়েরিটার ঘাড়ে! হ্যাঁ,ডায়েরিই হতে পারে আপনার মনের গোপন কথা শোনার উপযুক্ত বন্ধু। অবসরে বসে আপনার মনের যতো আক্ষেপ যত না পাওয়ার বেদনা সব লিখে রাখতে পারেন ডায়েরি। ডায়েরিই আপনার মনের গোপন সব কষ্টের কথা যতনে আগলে রাখবে।

সোনালী অতীতের সংরক্ষকঃ

ডায়েরি আপনার অতীত জীবনের সোনালী ইতিহাস করতে পারে অতি যত্নে। আমরা বর্তমান জীবনের ব্যস্ততায় অনেক সময় অতীত কে ভুলে যায়। এক্ষেত্রে ডায়েরি অতীতের রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করতে পারে। ডায়েরিতে লেখা আপনার কোনো স্মরণীয় ঘটনা পড়ে হয়ে যেতে পারেন আপ্লুত। অতীতের বিভিন্ন ঘটনা, অভ্যাস কিংবা কোনো প্রিয় মানুষের বলা কথা লিখে রাখতে পারেন ডায়েরিতে। যা একসময় আপনার মনের বারান্দায় সুখকর বাতাস হয়ে বয়ে যাবে আর প্রশান্তি জুড়াবে সারা গায়!

হয়ে উঠুন গোছালোঃ

আমদের মনে অনেক সময় অনেক ধরনের চিন্তা ভাবনা উঁকি দেয়। তবে তার সবটা আমরা ঠিক গুছিয়ে লিখতে বা বলতে পারি না। নিয়মিত ডায়েরি লেখার মাধ্যমে আমরা হয়ে উঠতে পারি আরো গোছালো। ডায়েরি লিখার মাধ্যমে মনের গভীরে পুঞ্জীভূত ভাবনাকে সাজাতে পারি আরো সুন্দর ও পরিপাটি করে। এছাড়াও নিয়মিত ডায়েরি লিখার ফলে লেখার সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও ডায়েরি লেখার আরো অনেক সুফল রয়েছে। ডায়েরি আপনাকে সময়ঞ্জানী হতে সাহায্য করে। বহমান সময়ের ব্যস্ততায় নিজেকে সময় দেয়ার ফুসরত না মিললে সেক্ষেত্রে ডায়েরি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আপনাকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে পারে ডায়েরি। কেননা আপনার সারাদিনের কর্মকান্ড ডায়েরি লিপিবদ্ধ করার ফলে কোন কাজটি কিভাবে করলে আরো ভালো হতো সেটি আপনি বুঝতে পারেন।

 শেষ কথাঃ‎

অনেক তো হলো ডায়েরির গুনগান। যদি ইতোমধ্যে আপনার অভ্যাসটা থেকে থাকে তাহলে তো চমৎকার, না থেকে থাকলে আজ থেকেই আরম্ভ করে দিন। দিনশেষে আপনার লোকসান হবে না বরং লাভই হবে।
 ডায়েরি লিখুন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন।